চেতনায় কুষ্টিয়া প্রতিবেদক ॥রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর। ৩ দিনে আগুন পুড়িয়ে ৩ জনসহ ৬টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ফারুক মণ্ডল (২২), দিনু মন্ডল (৬৫) ও আকতার মন্ডল (৪০) নামে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে ফারুক মণ্ডল, সোমবার ভোররাতে রাতে আক্তার মন্ডল ও দিনু মন্ডল মারা যান। মঙ্গলবার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামে নিহতদের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৪০) নামে ১ যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার। মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর শাহাপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় ১৩ মামলার আসামী জাকির মোল্লা (৪৮) খুন হয়েছে। সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের নুর সালাম (৩০) নামে এক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সোমবার ভোররাতে সে মারা যান।
দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের আগুনে বাপ-বেটাসহ ৩জনের মৃত্যু ॥ মরদেহ নিয়ে মিছিল
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ফারুক মণ্ডল (২২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এনিয়ে বাপ-বেটাসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃত ফারুক মণ্ডল দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের মৃত দিনু মন্ডলের ছেলে। তারা বাবা দিনু মন্ডল ও প্রতিবেশী আক্তার মণ্ডল একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত আক্তার মণ্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনু মন্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে। তাদের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদের মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আকাশে বাতাসে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা। হত্যার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মরদেহ নিয়ে মঙ্গলবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। মঙ্গলবার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামে নিহতদের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে জখম ও দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিন রাতে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের পরেরদিন দুপুরে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিনের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। এ মামলায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশে প্রতিপক্ষের লোকজন মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাবা-ছেলেসহ মোট তিনজন মারা গেছেন। আহত কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রতিপক্ষের পেট্রোল বোমার আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। যে রাস্তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। সেই রাস্তায় লাশের মিছিল হচ্ছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাদের সমস্যা নিয়ে আমি তিনবার বৈঠক করেছি, সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু একটা পক্ষ শান্তি ও সমাধান চায়নি। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মণ্ডলদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তিনটি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করল। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তি চাই। আমি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, চিলমারীর ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা গেছেন। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। সে সময় মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের ৫টি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়ে প্রায় ২৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
দৌলতপুরে পদ্মারচর থেকে যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৪০) নামে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচরের নীচে পদ্মা নদী থেকে ওই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মন্ডলের ছেলে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে মারুফ নিখোঁজ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মার বালুচরে খেলতে গিয়ে স্থানীয় শিশুরা ওই যুবকের পুঁতে রাখা হাত ও মাথার অংশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীকে জানায়। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহত যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করলে পরিবারের লোকজন পোশাক ও মাথা দেখে নিশ্চিত হয় সে মারুফ হোসেনের। মারুফ হোসেনকে অপহরন করে হত্যা শেষে পদ্মার বালুচরে পুঁতে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের দাবী। পুলিশ নিহত যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের মর্গে প্রেরণ করেছে।
দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, পদ্মারচর থেকে মারুফ হাসেন নামে এক যুবকের গলিত উদ্ধার হয়েছে। সে এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিল। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
দৌলতপুরে জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় ১৩ মামলার আসামী খুন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জাকির মোল্লা (৪৮) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর শাহাপুর গ্রামে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির মোল্লা শাহাপুর গ্রামের আরব আলীর ছেলে। পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের ১৩টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসি জানান, একই এলাকার আবু মন্ডলের কিছু কৃষি জমি জবর দখল করে রাখার অভিযোগ ছিল জাকির মোল্লার বিরুদ্ধে। আবু মন্ডল অনেক দেন দরবার করেও ওই জমি দখলমুক্ত করতে পারেননি। এবার ওই জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন জাকির মোল্লা। মঙ্গলবার সকালে জাকির মোল্লা ওই ক্ষেতে গেলে আবু মন্ডলের লোকজন তার ওপর হামলা চালান। এ সময় প্রতিপক্ষ ধারালো হাসুয়া দিয়ে তাকে উপর্যপুরি কোপায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জাকির। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জাকির মন্ডলের লোকজন প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং নানা অপকর্মের প্রতিশোধ নিতেই প্রতিপক্ষের লোকজন জাকির মোল্লাকে খুন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে কারণে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
দৌলতপুরে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সে একই এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে।
প্রতিবন্ধী নুর সালামকে কে বা কারা গলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সোমবার ভোররাতে সে মারা যান।
হত্যার ঘটনায় দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, প্রতিবন্ধী নুর সালামকে গলা কেটে আহত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা হলে ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
0 Comments