চেতনায় কুষ্টিয়া প্রতিবেদক ॥ ২০০৯ সালে প্রথম আলোচনায় আসেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আড়কান্দি গ্রামের শরিফুল শেখ। বহু প্রতিভার অধিকারী শরিফুল শেখ কে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি। প্রচার হয় বিটিভিতে। বহু প্রতিভার শরিফুল শেখ কে নিয়ে সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয় সেই প্রতিবেদনে। স্থানীয় বিজেএম ডিগ্রী কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে কাজ করতেন পান হাটে। লালন ভক্ত শরিফুল সেই সময়েই লিখেন অসংখ্য গান।
“দেশের সরকার, একটু খেয়াল করবেন হাটবাজার”, “কাজ করেও চলে না সংসার”, “গরুর মাংশের দাম জানি না” সহ অসংখ্যা জীবনমুখী গান গেয়ে এখন মানুষের মন জয় করে চলেছে ইত্যাদি খ্যাত শরিফুল শেখ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে যে কোন বিষয়ের উপর তাৎক্ষনিক গান লিখে, সেই গান পরিবেশন করেন তিনি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার সর্বত্রই এখন শরিফুল শেখের নাম।
শরিফুল শেখের আঁকা ছবি ভেড়ামারার প্রতিটা বিদ্যালয়ের ওয়ালে ওয়ালে শোভা পায়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দীন, মাইকেল মধুসুদন দত্ত’র ছবি ছাড়াও শিশু শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে অসংখ্য ছবি এঁকে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে স্থান করে নেন। নিজের লেখা গান পরিবেশন করেন ইত্যাদিতে। তার হাতে ১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হানিফ সংকেত। এরপর থেকেই চারন শিল্পি হিসাবে হাটে বাজারে, মঞ্চে, বিভিন্ন স্টেজে গান পরিবেশন করে ব্যাপক পরিচিতি পান শরিফুল শেখ।
এরপর বহু সময় গড়িয়েছে। এ সময়ে শরিফুল শেখ লিখেছেন এবং গেয়েছেন অসংখ্য গান। ২০১৮ সালের ১লা বৈশাখে মাছরাঙ্গা টিভিতে রাঙ্গা সকাল অনুষ্ঠানে ১ ঘন্টার লাইভে ৯টা লালনের গান করেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনে একাধিক বার আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসি’র বিশাল আকৃতির ছবি এঁকে চারিদিকে হইচই ফেলে দেন। প্রায় সকল স্যাটেলাইট টেলিভিশনেই সে সময় শরিফুল শেখকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করে ফলোও করে সংবাদ প্রকাশ করে।
বহু প্রতিভার শরিফুল শেখ’র এখন সময় কাটে গান নিজের লেখা গান আর ছবি এঁকে। জীবনমুখী অসংখ্য গান গেয়ে তিনি মানুষের মন জয় করে চলেছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ে লিখেছেন, দাম বেড়েছে চাল ডালের, দ্বিগুন বেড়েছে তেলের, কষ্ট হচ্ছে চালাতে সংসার। আমি গরুর মাংশের দাম জানিনা, “মুরগীর দোকানে যায় না, মনে নাই দেখতে কেমন ডিম, এখন খাচ্ছি ভর্তা ভাজি, ফুলকপি , পাতাকপি, আলু, বেগুন, শিম”। মধ্যবৃত্তদের দূরাবস্থা নিয়ে লিখেছেন, কাজ করেও চলে না সংসার, জেলখানা মনে হয় নিজের বাড়ি, শ্রমিকদের অধিকার আদায় নিয়ে লিখেছেন, আমি নিজে শ্রমিক, থাকি শ্রমিকের দলে, আমার অধিকারের কথা বললে, তোমাদের কেন জ্বলে সহ অসংখ্য গান।
ভেড়ামারা বিজেএম ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসলাম উদ্দীন বলেন, শরিফুল শেখ বহু গুনে গুনান্বিত। তার গানের কথা গুলো মানুষের কথা বলে। সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে। তার চিত্রকর্মও খুবই অসাধারন। একটু সহযোগিতা বা ভালো কোন সার্পোট পেলে শরিফুল শেখ হতে পারে দেশ সেরা তারাকাদের মধ্যে একজন। তার গানে যে বিদ্রোহ দেখা যায়, তাতে শিল্পি নচিকেতা, অঞ্জদ দত্ত, নকুল কুমার, কবির সুমনের গানের মতই চিত্র ফুটে উঠে।
শরিফুল শেখ বলেন, আমি নেশার বসেই মুলত গান লিখি এবং গান গায়। লালনের গান গাওয়ার পাশাপাশি ভালো লাগে বর্তমান সমসাময়িক বিষয়ের উপর গান গাইতে। দ্রব্যমূল্যের যাতাকলে প্রতিনিয়তই পিষ্ট হচ্ছে সাধারন মানুষ। সর্ব সাধারন এখন দিশেহারা। চারিদিকে অন্ধকার। আমি শিল্পি মানুষ। কষ্টের সব কথা গুলো গানে গানেই আমি জাতি কে জানাতে চায়।
0 Comments