মোশারফ হোসেন ॥ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় নির্বাচনের আমেজ গেলেও যায়নি পরবর্তী সহিংসতা। নৌকায় ভোট দেওয়ায় অপরাধে দফায় দফায় ১০ টি বাড়ি ও একটি দোকানে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের বহরুমপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। হামলায় শিশুসহ আহত হয়েছেন দুই জন। টিভি, ফ্রিজনহ বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের বহরুমপুর গ্রামে হামলার শিকার হয়েছে জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, রেজাউল আলম বাদশা, আলম শেখ, সাদেক আমিরুল, শামীম মেম্বর, আমজাদ, আব্দুল আজিজসহ ১০টি বাড়ি। আহত হয়েছেন মমিনুর রহমানের স্ত্রী নাজমা খাতুন (৩০) ও আমজাদ হোসেনের কন্যা শোভা (১২)। তাঁরা বর্তমানে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে জানিপুর ইউনিয়নের বহরুমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১০ টি বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসী। পুলিশের টহল রয়েছে এলাকায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্দ¦ীতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হবিবুর রহমান ও আনারস মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্দ¦ীতা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ আব্দুল মজিদ। ভোটে নৌকাকে ৬৭ ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল মজিদ। নির্বাচনের পর থেকেই দুই প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর ও হামলা। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে নৌকার সমর্থকদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের সমর্থক আকাশ, আশিক, লাল্টু, শাওন, ইউনুস আলী বিশ্বাস, রাসেল,রিপনসহ অনেকে। হামলায় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর শামীমেরর বাড়িসহ ১০ টি বাড়ি ও একটি দোকানে ভাংচুর করা হয়। এতে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র মালামালসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হামলার শিকার জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বলেন, বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সারা জীবন নৌকায় ভোট করেছি। গত নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়েছি। সেই অপরাধে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত মজিদ চেয়ারম্যান তাঁর লোকজন দিয়ে বারবার হামলা চালিয়েছে। হামলায় ভাতিজিসহ দুইজন আহত হয়েছে। '
৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর শামীম বলেন, ১০ বছর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখন আওয়ামী লীগের লোকজন জামাত বিএনপি নিয়ে বারবার হামলা করছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় তাঁরা হামলার সুযোগ পাচ্ছে। এবার অন্তত ১০ টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে। '
ক্ষতিগ্রস্থ আমজাদ বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে চেয়ারম্যানের লোকজন রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাংচুর করেছে। প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী হবিবর রহমান বলেন, ' নৌকায় ভোট করায় সমর্থকদের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার হামলাকারীদের ইন্ধন দিচ্ছেন। হামলাকারঅরা বলেন কেউ মামলা বা স্বাক্ষী হলে আবার তাদের উপর হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, এলাকায় ভাংচুরের কথা শুনেছি। তবে আমি বা আমার লোকজন একাজ করিনি। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে দল করি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও দলের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছি।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, গত ইউপি নির্বাচন থেকে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মাঝে বিবাদ এখনো চলমান। তারই জের ধরে প্রতিপক্ষরা শামীম মেম্বর ও তার সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ পাইনি,অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
0 Comments