চেতনায় কুষ্টিয়া প্রতিবেদক ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জাতীয় যুব জোট (জাসদ) উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান ওরফে সালাম হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরীকে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নিহত মাহবুব খানের বাবা এনামুল হক মামলাটি করেন বলে শুক্রবার রাতে নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
মাহবুবের চাচাতো ভাই আহসান হাবীব জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে থানায় এজাহার জমা দেওয়া হয়। এটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে ওসি জাবিদ হাসান বলেন, মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ২২ জনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও আট-নয়জন। প্রধান আসামি করা হয়েছে সেলিম চৌধুরীকে। ২ নম্বর আসামি তাঁরই ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ ওরফে টোকেন চৌধুরী।
ওসি জানান, এরই মধ্যে আটক তিনজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিবুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও সোহান। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের ধরতে মাঠে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলায় সেলিম চৌধুরীর পরিবারের ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সেলিম দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তাঁর ভাই বুলবুল আহমেদ দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও আসাদুজ্জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাঁদের বড় ভাই কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী।
উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের আমদহ গ্রামে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাহবুব খানকে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ও রগ কাটা করা হয়। ওই দিন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত মাহবুব আমদহ গ্রামের এনামুল হকের ছেলে। তিনি মৌসুমি বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মাহবুব খান হত্যার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনার বিচার চেয়ে ঢাকায় জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। জাতীয় যুব জোট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয় বলে জাসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, মাহবুব খান তাঁর এলাকায় সব ধরনের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। এলাকার মাদক, সন্ত্রাস, খুন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর রুখে দিতেই মাহবুবকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের এলাকার লোকজন ভালোভাবেই চেনেন। তাঁদের কোন এমপি ইন্ধন দেন, কোন এমপি সাহায্য করেন, সেগুলোও সবাই জানেন। যেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাহবুবকে হত্যা করেছে এবং যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের ইন্ধন জুগিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শিরীন আখতার।
জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন খান, সাখাওয়াত হোসেন, নইমুল আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আলীম, জাতীয় যুব জোটের সহসভাপতি কাজী সালমা সুলতানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামসুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক প্রমুখ।
0 Comments