চেতনায় কুষ্টিয়া প্রতিবেদক ॥ খুব কাইন্দিছি (কান্না), কবে যাব সাঁইজির ঘরে। আজ আশা পূরুণ হয়চে, এখন শান্তি লাগচে। কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা নজিরা ফকিরানী। ৭৬ বছরের অসুস্থ শরীর নিয়ে চাচাতো বোন বেগম ফকিরানীর সঙ্গে এসেছেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে। আখড়াবাড়ির এক পাশে ক্লান্ত শরীরে পা মেলে বসে থাকা নজিরা বলেন, করোনায় দুই বছর বন্ধ ছিল সাঁইজির ঘর। এখন সব খোলা। একটু বিশ্রাম নিয়ে সাঁইজির চরণে ভক্তি দেবেন।
শুধু নজিরা-বেগমরাই নন, দীর্ঘ দুই বছর পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু–ভক্তরা কুষ্টিয়ায় ছুটে এসেছেন। আসন পেতে খুঁজে ফিরছেন সাঁইজির প্রেম-ভালোবাসা। সাঁইজিকে আত্মায় ধারণ করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ফলে আখড়াবাড়িতে আবার ফিরেছে প্রাণের স্পন্দন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আখড়াবাড়ির মাঠে মুল মঞ্চে আলোচনা সভায় লালন উৎসবের উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় লালনের অহিংস মানব মুক্তির শিক্ষা ও আধ্যাত্মবাদ নিয়ে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান ও লালন বিশ্লেষক এ্যাডভোকেট লালিম হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মৃনাল কান্তি দে, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম, কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ জিপি এ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান মাসুদ, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ড রফিকুল আলম টুকু, জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আমিনুল হক রতন, এনজিও সংস্থা দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে ওই মঞ্চে লালনের বানী (গান) প্রচার হয়।
বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্নিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার দেহত্যাগের পরও প্রথমে অনুসারীরা পরে লালন একাডেমি এ উৎসব চালিয়ে আসছে। করোনার কারনে গত দুই বছর বন্ধ ছিলো লালন উৎসব। এবারের লালন উৎসবে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার লালন অনুসারী, ভক্ত, বাউল ফকিররা অংশ নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে লালন উৎসব।
0 Comments