Random Posts

চেতনায় কুষ্টিয়া পত্রিকায় কবি, উপন্যাসিক ও গবেষক এম জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষাৎকার ॥ কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি এখন বাজারে

আব্দুল আলিম ॥ এই অঞ্চলের প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে সাপ্তাহিক চেতনায় কুষ্টিয়া পত্রিকায় কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি উপর সাক্ষাৎকার দিয়েছেনে কবি, উপন্যাসিক ও গবেষক এম জাহাঙ্গীর আলম। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি এখন সর্বত্রে পাওয়া যাচ্ছে।
চেতনায় কুষ্টিয়াঃ কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি লেখার অনুপ্রেরণা আপনি কিভাবে পেয়েছিলেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ আমি মূলত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, গান এবং সাহিত্য বিষয়ে গবেষণাধর্মী লেখাগুলো লিখে থাকি। ৬৪ জেলার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনা গতিধারা'র প্রকাশক সিকদার আবুল বাশার সাহেবের নিকট আমার লেখা বান্ধবী উপন্যাসটি প্রকাশ করতে দেওয়ার সময় তিনি কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে তিনি মারা গেলে তাঁর ছোট ভাই আহমেদ কাওছার বইটি লেখার জন্য অনুরোধ জানান। তারপরেই কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি লেখার কাজ শুরু করি।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ ইতিহাস সংগ্রহের জন্য কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে  আপনাকে ছুটতে হয়েছে। কতদিন ধরে এই ইতিহাস সংগ্রহের কাজ করেছিলেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ পুরো ২০২০ সাল ইতিহাস সংগ্রহের কাজে ব্যয় করেছি। প্রায় প্রতিটা দিন খুব সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফিরেছি। কোন কোন দিন রাত ১০টায় বাড়ি ফিরেছি। দুপুরের খাবার খেয়েছি বাইরে। ইতিহাস সংগ্রহ করা একপর্যায়ে নেশায় পরিনত হয়েছিল।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ আপনার লেখা  কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটিতে ছয়টি উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে, সেগুলো কিভাবে সাজিয়েছেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম  ঃ আমার লেখা বইটিতে পাঠকের সুবিধার্থে কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ ছয়টি খন্ডে সাজানো আছে। প্রতিটা উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধক্ষেত্রের নাম, বর্ণনা, তারিখ, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও বিশেষ বিশেষ কিছু সাক্ষাৎকার সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বইটির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্য নামে আরো একটি খন্ড আছে। ওঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নাম।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা পাঁচশো পৃষ্ঠার উপরে। ছাপা খরচও অনেক। খরচ কি আপনি বহন করেছেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ না, সম্পূর্ণ খরচ বহণ করেছে গতিধারা প্রকাশনী। তবে ইতিহাস সংগ্রহ করতে গিয়ে আমারও কমবেশি খরচ হয়েছে। তারপরেও বলবো, বইটি লিখতে পেরেছি এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।
চেতনায় কুষ্টিয় াঃ বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে কয়টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার নিদিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করতে পেরেছেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ পুরোপুরি সংখ্যা নির্ধারণ করতে পেরেছি বললে ভুল হবে। আমি সর্ব প্রথম তথ্য পেয়েছিলাম ক্যাজুয়ালি ৪৪টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আমার প্রথম টার্গেট ছিল ওই ৪৪টি যুদ্ধক্ষেত্রের নাম, তারিখ ও বর্ণনা সংগ্রহ করা। সেটা অনেক কষ্টে সংগ্রহ করেছি, সেই সাথে আরো বেশ কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছি। সব মিলিয়ে আমার বইটিতে ৫০টির অধিক যুদ্ধক্ষেত্রের নাম তারিখ ও ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ ইতিহাস সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে সম্পর্কে কিছু বলবেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ অভিজ্ঞতা তিক্ত এবং খুবই কষ্টকর। বর্ণনা করা খুবই কঠিন। ধৈর্যহারা হলে এই কাজটা করা দুরুহ ব্যাপার হতো! ইতিহাস সংগ্রহ করতে গিয়ে  কোথাও সম্মানের সাথে কাজ করেছি আবার কোথাও একটু সাক্ষাৎতের আশায় ভিখারির মতো দরজার বাইরে দাড়িয়ে থেকেছি। যদিওবা দেখা হয়েছে-আমাকে সময় দিতে চায়নি, অন্য একদিন আসো বলে  ঘুরিয়ে দিয়েছে। ঠিক মতো কথা বলতে চায়নি অনেকে। মাঝপথে বিগড়ে গিয়ে কাজটা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু মনের সাথে যুদ্ধ করে একরকম চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজটি নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ বইটি নিয়ে আপনি কি আশা করছেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ বইটি নিয়ে আমার বড় ধরণের কোন আশা নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত কবিতা বা উপন্যাসের বই না। যদিও আমার কবিতা, উপস্যাসের যথেষ্ট পাঠক প্রিয়তা রয়েছে। তবে একটা কথা না বললেই নয়। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি কুষ্টিয়ার গণমানুষের বই। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বইটি লিখিত হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার প্রতিটা স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে সংগ্রহ করে রাখার মতো বই। সর্বশ্রেনির মানুষের এই ইতিহাস জানা উচিৎ। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বইটি থেকে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানতে পারলে সেটাই আমার জন্য বড় পাওয়া।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ এ যাবৎ পর্যন্ত আপনার লেখা বইয়ের সংখ্যা কয়টি?  
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ এপর্যন্ত ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। মনসমুদ্রে মনামি ও বান্ধবী নামে দুটি উপন্যাস এবং স্মৃতির বাঁশি বাজে নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি নতুন সংযোজন। এছাড়াও দুটি উপন্যাস ও দুটি কাব্যগ্রন্থে'র কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আসবে।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ বই প্রকাশের পর তেমন কোন স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে যে কারণে আপনি আনন্দ বা কষ্ট পেয়েছেন?
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ বই প্রকাশের পর বই নিয়ে অনেকগুলো স্মরণীয় ঘটনা  ঘটেছে। তার মধ্যে একটি ঘটনায় বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম।
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ সংক্ষিপ্ত আকারে যদি বলতেন।
লেখক এম জাহাঙ্গীর আলম ঃ ২০১৯ সালে চ্যানেল আই টেলিভিশনে আমার নতুন দুটি বইয়ের উপরে সাক্ষাৎকার শেষ করে দুটি বই হাতে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঢাকা কল্যাণপুর থেকে ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বামের আসনে এক যুবক বসেছিল। আমার হাতে বই দেখে মনসমুদ্রে মনামি উপন্যাসটি চেয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করলো। মাঝ পথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি যুবক বইটা মনোযোগ দিয়ে পড়েই চলেছে। অপরিচিত যুবক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। নাম ফারুখ। বনপাড়ায় নেমে যাবে। বইটির ২৬ পর্বের মধ্যে ১৭ পর্ব পর্যন্ত পড়া শেষ করেছে। বনপাড়া পৌছানোর আগে যুবক আমাকে বলল, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি? বলো..। বইটা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন? কেন? বড় ভাই, আমাকে বইটা পড়ে শেষ করতে হবে-নইলে মনে একটা কষ্ট থেকে যাবে। প্লিজ, দামটা নিয়ে বইটা আমাকে দেন। সময় নেই, সামনে নামতে হবে। আমি বললাম, দাম লাগবেনা, বইটা তুমি নিয়ে যাও। আমার মোবাইল নম্বরটা রাখো পড়া শেষ করে জানাবে কেমন লাগলো। বইটার লেখক আমি নিজে। সে তখন বইটার লেখক পরিচিতির উপর আমার ছবি দেখে এমন একটি হাসি দিল যা ভোলার নয়। সে আমাকে জোর করে ১৫০টাকা দিয়ে বলেছিল এটা আপনাকে নিতেই হবে। পরের দিন ফোন করে বলেছিল, বইটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।  আপনার প্রতিটা বই আমার চাই। তাকে আমার লেখা বই পাঠিয়ে দিতে হয়। সেদিন মনে হয়েছিল লেখক হিসাবে আমি সার্থক। উপন্যাস বইটা পড়ে অনেক মেয়ে পাঠক ফোন করে ঝগড়া করেছে। আমি নাকি নায়ক'কে ইচ্ছে করে মেরে ফেলেছি। হা হা হা...
চেতনায় কুষ্টিয়া ঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। আবার কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Post a Comment

0 Comments