জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল ॥
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডল হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে হামলা, ভাংচুর-লুটপাটের মহোৎসব। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যা পরবর্তী ভাংচুর-লুটপাট, নারী নির্যাতন এ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্রামে। এমনই একটি গ্রামের নাম ‘চাঁদগ্রাম’। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের কথা। সরেজমিনে ঘুরে দাঙ্গা কবলিত চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যে পাড়া গ্রামে ভয়ঙ্কর এসব চিত্র দেখা গেছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে আধিপত্ত্য বিস্তার কেন্দ্র করে চলমান বিরোধের জের ধরে গুলি করে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডল নামে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে খুন করে প্রতিপক্ষের লোকজন। খুনের ঘটনার পর তা মোড় নেয় স্থানীয় জাসদ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে।
নিহত সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডল একই এলাকার মৃত ওমর আলীর ছেলে। তিনি চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ওই দিন এ ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও ৫জন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এঘটনায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানের ছোট ভাই এনামুল হক মন্ডল বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন এবং তাঁরই ছোট ভাই চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি আব্দুল হাফিজ তপনসহ ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের নামে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা এখন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, একই এলাকার সোনা মালিথার ছেলে মিন্টু মালিথা (২৮), একই গ্রামের নজরুল মালিথার ছেলে রনি মালিথা (২৮), আব্দুল হামিদের ছেলে জনি (২৮), ড্যানি (২৫) এবং জফো প্রামাণিকের ছেলে জারমান (৪০)। বাঁকি আসামিরা এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২ জনের জামিন হয়েছে। তারা হলেন ড্যানি ও জারমান।
হত্যা পরবর্তী গ্রেপ্তার আতঙ্ক গ্রামটিতে পুরুষশূণ্য থাকায় বাড়ি-ঘর ভাংচুর, নারী নির্যাতন এ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫০ বছরের বংশীয় দ্বন্দ্ব। এখানকার দুটি দলের সংঘাত আর হানাহানি চলছেই। ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর আর লুটপাট হচ্ছে অসহায় মানুষের সহায় সম্বল। প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলার ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ফলে গ্রামটি রয়েছে পুরুষশূন্য। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। দিনে-দুপুরে চলছে লুটপাটও। গ্রামটিতে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে সংগঠিত হতে পারে হত্যার মতো ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার যাঁরা জড়িত নন, এমন অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়ি-ঘর লুটপাট করা হচ্ছে। হত্যার ঘটনা ও মামলার পর থেকেই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ৪০থেকে ৫০টি পরিবার। ফলে এলাকার একদল দুর্বৃত্তরা বাড়ি-ঘরে লুটপাট শুরু করেছে। লুটপাটে জড়িত দুষ্কৃতকারীরা সাধারণ ও নিরীহ মানুষের বাড়িতেও লুটপাট চালাচ্ছেন। এতে গরু, ছাগল, ফ্রিজ, টিভি, এমনকি জামাকাপড়সহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, খেতের ফসল নষ্ট করা হচ্ছে। লুটপাট ঠেকাতে দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলবুল কবির বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকে খুন করা হয়েছে। পরদিনই অনেকেই তাদের জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লুটপাটের কথা ছড়িয়ে আসামির অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, এ হত্যাকান্ডের ঘটনা বংশীয় দ্বন্দ্ব প্রায় ৫০ বছরের। মাঝে মাঝেই এদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। এখানে আমিসহ আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, এমন কয়েকটি ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ওই এলাকায় সংঘাত এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি’২২ শুক্রবার সকাল ৯টার সময় কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডলকে প্রক্যাশে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় আরও ৩ ভাইসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাঁদের কে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে চাঁদগ্রাম চরপাড়া মাঠে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডল চাঁদগ্রামের ওমর আলী মন্ডলের ছেলে। গুলিবিদ্ধরা হলেন, চাঁদগ্রামের নিহতের ভাই ও ওমর মন্ডলের ছেলে আনিসুজ্জামান ইউনুস মন্ডল (৪৮), আব্দুল খাল্লেক (৪৪), বাদশা মন্ডল (৪৪) এবং ওই গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে আবু বক্কার কুব্বাত (৩৬) সহ ৫জন। এর মধ্যে আহত বাদশা মন্ডলের পায়ের রগ কেটে যাওয়ায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। র্দীঘ দিন ধরে মন্ডল ও মালিথা বংশেল মধ্যে পূর্ব শত্রুতা চলে আসছিলো । এরই জের ধরে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক মন্ডলকে গুলি করে হত্যা করেছে।
0 Comments