Random Posts

সৌন্দর্যের রাণী সাজেক ভ্যালি ॥ প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল

রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির ভ্রমণ করার ইচ্ছা ছিলো অনেকদিন ধরে। আমাকে বারবার টানছিল। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ৪৮ জনের একটি দলে সহকর্মী, বড়ভাই, বন্ধু ও ছোট ভাইদের সাথে বের হলাম। আমাদের ৪৮ জনের সাথে ছিলো বাসের ড্রাইভার ও হেলপার। কিন্তু ভয় ছিল যাওয়া ঠিক হবে কিনা। শেষ পর্যন্ত ভেড়ামারা কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন সময় ব্যস্ত থাকার পরও হুট করেই জানিয়ে দিলাম আমি যাচ্ছি। রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি আমার প্রথম ভ্রমণ। ২৩ শে নভেন্বর’১৯ খাগড়াছড়ি’র দীঘিনালা বাজারে দুপুর ১টার সময় বাসটি থেমে পড়ে। ওখানে পৌঁছানোর পর আমাদের নিজ নিজ ব্যাগ গুলো একটি হোটেলে রেখে দিই। সবাই ছোট একটি ব্যাগ ও দুপুরের খাওয়ার নিয়ে চান্দের গাড়িতে উঠি। ৪টি চান্দের গাড়ি দুপুর দেড়টার সময় ছেড়ে যায়। চান্দের গাড়ি চলতে চলতে এক সময় সেনাবাহিনী ক্যাম্পের নিকট থেমে পড়ে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে জানানো হলো দুপুর ৩টার সময় পুলিশের প্রহরায় সাজেক ভ্যালিতে নিয়ে যাওয়া হবে। কিছুটা সময় পাওয়ায় আমরা ৪৮ জন  ভ্রমণকারীরা চান্দের গাড়ির উপর দুপুরে খাওয়া শেষ করি। দুপুর সোয়া ৩টার সময় পুশিশের প্রহরায় প্রায় ৫০টি গাড়ি ভ্রমণকারীদের নিয়ে সাজেক ভ্যালির উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়ি ছুটছে দু’পাশের সবুজ আর উঁচু পাহাড় মাড়িয়ে। এভাবেই চললো ৪৯ কিলোমিটার। ১৮শ ফুট উঁচুতে ওঠার পর স্বপ্নের মতো জায়গা। মেঘের ভেলার ফাঁকে সূর্যের উঁকিঝুঁকি, হিমশীতল হাওয়া সব মিলিয়ে সেখানে পাহাড়ের রং যেন আকাশের মতোই। চান্দের গাড়িতে সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছানোর সময় চারপাশের সৌন্দর্যে মন ভরে উঠেছিল। সেখানে আদিবাসীদের জীবনধারা একটু একটু করে চোখের সামনে ধরা পড়তে লাগলো। কোথাও কোনও একটি গাছের ছায়ায় মা তার ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কোথাও বা বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে একমনে পাহাড়ি হুঁকা টানছেন এক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ যুবক-যুবতীরা। এসব দেখতে দেখতে যার যার নির্ধারিত কটেজে পৌঁছে গেলাম। এই দুর্গম জনপদটি এখন আর আগের মতো নেই।

সন্ধ্যার সময় ৪টি চান্দের গাড়ি নিয়ে সাজেক ভ্যালীতে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে সাজেক হিল ভিউ রির্সোট উঠি। ২টা রির্সোটে আমরা মোট ৪৮ জন ১২ টি রুমে অবস্থান করি। একটি রুমে ৪জন করে। আমাদের রুমের জানালা দিয়ে সূর্যের উঁকিঝুঁকি, হিমশীতল ও পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আমারা ৪ জন রুমটি দেখে খুশি হই। আমার রুমমেট ছিলেন, ভেড়ামারা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসলাম উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগ প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান শামিম ও  আলী হোসেন। আমরা সবাই ফেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে হেলিপ্যাডে যায়। হেলিপ্যাডের উপরের বাঁশের চুগায় রং চা বিক্রি করছে। চায়ের দাম নিলো প্রতিটি ২০ টাকা। চা খাওয়া শেষে আমরা সেনাবাহিনী ক্যাম্পের কাছে আরেকটি হেলিপ্যাডে যায়। সেখানে বেড়ানো শেষে আমরা যার যার রুমে চলে আসি। সাজেক হিল ভিউ রির্সোট এর সামনে প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম তার নিজস্ব গানের সরঞ্জাম নিয়ে গানের আসর বসায়। গানের আসরে ভ্রমণকারীরা ভীড় জমায়। এক পর্যায়ে রাস্তার দুই পাশে ব্লক হয়ে হয়ে গেলে জনসাধারন চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হয়। রাত ১২ টা পর্ষন্ত গানের আসর চলে। গানের আসর শেষ হলে সাজেক হিল ভিউ রির্সোট এর নিজস্ব রান্না করা রাতের ডিনার শেষ করে সবাই ঘুমাতে যায়। সকালে সুর্ষ উঠার আগেই সবাই সেনাবাহিনী ক্যাম্পের কাছে হেলিপ্যাডের নিকট ভ্রমণকারী ভীড় জমায়। সবাই একসাথে সুর্য দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকে। সুর্য দেখার পর কেউ কেউ পাশ্ববর্তী পাহাড়ে উঠে। পাহাড়ের উপর গ্রাম দেখতে অনেকে চলে যায়। সকাল সোয়া ১০টার সময় চান্দের গাড়িতে করে আমরা সাদেক ভ্যালি কে বিদায় জানিয়ে চলে আসি।
উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে পুরো সাজেক ভ্যালি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে ও ১৮শ ফুট উঁচুতে সাজেকে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে খুঁটিতে তার টাঙানোর কাজ।
সাজেক ইউনিয়নের আয়তন ১ হাজার ৭৭১ বর্গকিলোমিটার। সেখানে ৩০ হাজার লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এছাড়া প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছেন সাজেক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সমাদৃত সাজেক ভ্যালিতে অর্ধশতাধিক রিসোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে। এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে উন্নয়নের জন্য প্রায় ৫৬৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পের আওতায় এ তিন জেলায় ১২টি নতুন ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান সাব-স্টেশনগুলোর সংস্কার ও লোড ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। পুরাতন লাইন সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন। এরমধ্যে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎতের লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সাজেকসহ তিন জেলার ৫৬ হাজার নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের খরচ অনেকটা কম। যেকোনও উপজাতির ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নেবেন। পছন্দ অনুযায়ী কটেজে থাকতে চাইলে আগে থেকেই আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভালো।

প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল
সভাপতি
ভেড়ামারা প্রেসক্লাব
এসএসসি ১৯৯১
ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল স্কুল
ভেড়ামারা,কুষ্টিয়া।
মোবাইল-০১৭১১-৪৮১৮২১
ই-মেইল-jewel481@gmail.com

Post a Comment

0 Comments