Random Posts

আলোর পথযাত্রী

আজাদ বাকী ॥ মানুষ স্বভাবগত ভাবেই স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। ভালবাসে স্বপ্ন ডানার রঙ্গীন পাখা মেলে প্রজাপতির মত নীল আকাশে উড়তে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন, বড়ই নির্মম। ক’জনা পারে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে!
২০০০ সালের কথা, ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র মোঃ রিপন হোসেন কম্পিউটার শেখার নেশায় অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে পড়েন। কিন্তু সাধ থাকলেই তো হবে না, সাধ্য থাকতে হবে। গরীব পিতা প্রায় নামই শোনেননি কম্পিউটারের! কম্পিউটার তো দূরের কথা, সে সময় একটা বাটন মোবাইল ফোনও তার পরিবারের কাছে অনেক প্রত্যাশিত বস্তু, যেটা কেনা পরিবারের কাছে প্রায় অসম্ভব। কিন্তু রিপন তো নাছোড় বান্দা, তাকে কম্পিউটার শিখতেই হবে। অবশেষে ২০০১ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার পর অনেক কষ্টে কিছু টাকা মেনেজ করে ভেড়ামারাতে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হন এবং মাত্র কয়েকদিন শেখার সুযোগ পান। তার শেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু শিখতে তো টাকা লাগবে, নিজের কম্পিউটার লাগবে, পাবে কোথায়! শেষে একটা অফিসে কম্পিউটার অপারেটরের কাজ নেন। অফিস শেষ হলে তিনি নিজে নিজে চর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। শিখে ফেলেন ইন্টারনেটের ব্যবহার। যদিও তখন ইন্টারনেট খুবই দুষ্প্রাপ্য ছিল। টেলিফোন থেকে ডায়ালের মাধ্যমে নেটে কানেকশন নিতে হতো তাও মাত্র ২৫কই ক্ষমতার যা দিয়ে ইউটিউব দেখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর নিরলস পরিশ্রমের ফলে অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে রিপন হোসেন কিছু সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিং এর কাজ শিখে যান। যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করেন একটি সুন্দর ও কার্যকরী সফটওয়্যার যেটা দেখে কর্তৃপক্ষ দারুন খুশি। আস্তে আস্তে রিপন হোসেনের গ্রহন যোগ্যতা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে উৎসাহ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু সফটওয়্যার তৈরি করেন তিনি। সুগম হতে থাকে আয়ের পথ। দু’চোখে রঙ্গীন স্বপ্নে ছল্্ছল্্ করে উঠে। কিনে ফেলেন একটি কম্পিউটার। কাজের গতি বেড়ে যায় বহুগুণ। ততদিন ইন্টারনেটের গতি অনেক বেড়েছে। মফস্বলে থেকে আউট সোর্সিং এর বিষয়ে কোন প্রশিক্ষক বা জানা লোক না পেলেও ইউটিউব দেখে দেখে এবং অদম্য চেষ্টায় নিজেকে প্রস্তুত করেন একজন সফল ও দক্ষ সফটওয়্যার ও ওয়েভ ডেভেলপার হিসেবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতে নিজের ঘরের কোনে বসে কাজ করছেন আমেরিকা, কানাডার মত দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে। সুনামের সাথে সাথে আয় করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। শুধু নিজের জন্যই নয়, অত্যন্ত প্রচার বিমুখ, নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের ছেলে রিপন হোসেন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার বেকার তরুনদের ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, কিছুটা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ভেড়ামারাতে একটি মানসম্মত কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবেন যেখানে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বেকার ছেলেমেয়েরা কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখবে।

Post a Comment

0 Comments