চেতনায় কুষ্টিয়া প্রতিবেদক ॥ কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর মৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্রীকে (১৫) ছুরিকাঘাত ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার অভিযোগে এক কিশোরকে (১৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার দিবাগত রাতে মিরপুর পৌরসভার একটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি, খুন হওয়া কিশোরীর সঙ্গে গ্রেপ্তার কিশোরের প্রায় এক বছর প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় কিশোরীকে কৌশলে রাতের বেলায় বাড়ি থেকে ডেকে মাঠে নিয়ে হত্যা করে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আদালতে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে কিশোরীর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশটির ময়নাতদন্ত করেন হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রুমন রহমান ও সুতপা রায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নৃশংসভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল।
বুধবার বেলা তিনটায় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক সড়কের মিরপুর পৌরসভার ভাঙাবটতলা এলাকায় একটি ভুট্টাখেত থেকে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি মিরপুর পৌর এলাকায়। সে স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে ওই স্কুলছাত্রী নিখোঁজ হয়। মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন তার বাবা।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর রাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শহরের কুরিপোল এলাকা থেকে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওসি গোলাম মোস্তফার ভাষ্যমতে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর হত্যার কথা স্বীকার করেছে। কিশোরীর সঙ্গে ওই কিশোরের প্রায় এক বছর প্রেম চলছিল। এ ছাড়া আরেকটি প্রেম ছিল কিশোরের। সম্প্রতি সেটি হত্যার শিকার হওয়া কিশোরী জেনে যায়। কয়েক দিন আগে ওই কিশোরী হুমকি দেয়, যদি তাকে বিয়ে না করে তবে সে আত্মহত্যা করে তার নাম লিখে যাবে।
ওসি বলনে, এমন কথা শোনার পর কিশোরীকে হত্যার পরিকল্পনা করে ওই কিশোর। সেই অনুযায়ী বুধবার গভীর রাতে কিশোরীকে কৌশলে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। বিয়ের কথা বলে তাকে মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ‘সারপ্রাইজ’ আছে বলে ওড়না দিয়ে কিশোরীর চোখ বাঁধে। এরপর ছুরি দিয়ে পেটে ও গলায় আঘাত করে। মাটিতে পড়ে গেলে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি কলেজে পড়েন। মেয়েটি স্কুলে পড়তো। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে ছেলের বাড়ির লোকজন রাজি হয়নি। এই চাপেই কিশোরীকে ডেকে হত্যা করে ছেলেটি। তিনি চাকু দিয়ে মেয়েটির গলা কেটে ফেলেন, এরপর রশিতে ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় কিশোরী প্রেমিকাকে ভূট্টা ক্ষেতে ডেকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরের বিরুদ্ধে।
0 Comments